শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:৫৭ পূর্বাহ্ন
তরফ নিউজ ডেস্ক : বরিশালে বেড়েছে ইলিশের সরবরাহ, এর ফলশ্রুতিতে কমেছে দাম। বাংলা ভাদ্র মাসের শেষের দিকে এ চিত্র শুধু বরিশালের নয় চট্টগ্রাম, লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালী, ভোলা, চাঁদপুর, পটুয়াখালী, বরগুনা, শরীয়তপুরসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলেও প্রায় একই চিত্র, সাগর নদীতে মিলছে প্রচুর ইলিশ।
মৎস্য বিশেষজ্ঞ, সংশ্লিষ্ট জেলার মৎস্য কর্মকর্তা ও জেলেরা বলছেন অন্যান্য বছরের চাইতে এবার জালে ইলিশ আসছে বেশি। জেলে ও ইলিশ বিশেষজ্ঞরা বলছেন আরও কিছুদিন ইলিশ পাওয়া যেতে পারে। প্রচলিত ভরা মৌসুম পেরিয়ে অক্টোবরের শেষেও মিলতে পারে প্রচুর ইলিশ।
ইলিশের প্রচলিত ভরা মৌসুম জুন থেকে আগস্ট। কিন্তু সেপ্টেম্বরে এসেও সাগর-নদীতে ঝিলিক দিচ্ছে রুপালি ইলিশ। কিন্তু তাতেও খুব একটা খুশি হতে পারছেন না জেলেরা। কারণ, অক্টোবরের নিষেধাজ্ঞা শুরুর বেশি দিন বাকি নেই।
মৎস্য গবেষকরা বলছেন, মে-জুন মাসে সাগরে সব ধরনের মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা থাকে। মা ইলিশ রক্ষায় নিষেধাজ্ঞা আসে অক্টোবরে। দুই নিষেধাজ্ঞার মধ্যবর্তী সময়টা ইলিশের ভরা মৌসুম। এই সময়ে সাগর ও নদীতে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ে; আবার আকৃতিও বড়। কিন্তু এখন ইলিশের ভরা মৌসুমের পরিবর্তন খুব স্পষ্ট। ইলিশের প্রজনন ও বিচরণের সঙ্গে বৃষ্টির সম্পর্ক রয়েছে। বৃষ্টির মৌসুমে হেরফের হওয়ায় ইলিশের ভরা মৌসুমও সরে এসেছে সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে।
বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও ফেনী ইউনিভার্সিটির উপাচার্য ড. মো. সাইফুদ্দিন শাহ্ বলেন, আশার খবর হলো এ বছর ইলিশের উৎপাদন বেড়েছে।
ফেনী ইউনিভার্সিটির উপাচার্য বলেন, সরকার মৎস্য ব্যবস্থাপনায় সংরক্ষণ কাজে বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞারোপ করেছে। দেশের মোহনা অঞ্চলের নদীগুলোতে বিজ্ঞানভিত্তিক অ্যাডাপ্টিভ কো-ম্যানেজমেন্ট এবং জেলেদের অর্থনৈতিক ও সামাজিক-প্রতিবেশিক সক্ষমতা বাড়ার উদ্দেশে চলমান ইকোফিশ প্রকল্পে প্রজনন মৌসুমে মা ইলিশ এবং পরে জাটকা ধরায় নিষেধাজ্ঞারোপে ইলিশের উৎপাদন বেড়েছে।
তিনি আরও বলেন, ইলিশের মৌসুমেও আসছে পরিবর্তন, এর কারণ হচ্ছে বৃষ্টির সময়কাল, বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে এমনটা হচ্ছে বলেও তিনি মনে করেন।
ইলিশের উৎপাদন ও মৌসুম পরিবর্তনের বিষয়ে কথা হয় বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের চাঁদপুর নদী কেন্দ্রের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা (চলতি দায়িত্ব) ড. মো. আনিসুর রহমানের সঙ্গে।
তিনি বলেন, ইলিশের উৎপাদন আমরা আশা করছি, এ বছর বেশি থাকবে, তার কারণ হচ্ছে যে এখানে নির্ভর করে বৃষ্টিপাতও পানির গুনাগুনের উপরে, করোনার কারণে অনেক কিছু বিপরীত দিকে গেলেও পানি ও নদী দূষণ কিছুটা কম হয়েছে, নদীতে যান চলাচল কিছুটা কম করেছে, যে কারণে পানির গুনাগুন ভালো আছে। ফলে পানিতে মাছের ভালো খাবারও আছে। এ বছর একটু আগে থেকেই আসা শুরু করেছে, এছাড়া এবারের ইলিশের আকারও বেশ বড় ছিল। আমাদের গবেষণা বলছে এবারের মাছের উৎপাদন আগের বছরগুলোর চাইতে ভালো থাকবে।
ইলিশের মৌসুমের ব্যাপারে তিনি বলেন, ইলিশের মৌসুমতো সাধারণত সেপ্টেম্বর-অক্টোবর হয়ে থাকে। অক্টোবরের ২২ দিন নিষিদ্ধ থাকতে পারে। তবে এবার অক্টোবরে দুটি অমাবস্যা-পূর্ণিমা আছে একটি অক্টোবরের শুরুর দিকে (২ অক্টোবর) আরেকটি আছে অক্টোবরের শেষের দিকে (৩১ অক্টোবর) আমরা আশা করছি, মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের আলোকে অক্টোবরের শেষের দিকেই প্রজনন মৌসুমের ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা আসবে।
কথা হয় লক্ষ্মীপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. বিল্লাল হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, চলতি মৌসুমে ইলিশের উৎপাদন বেড়েছে। জেলেরা বেশ খুশি, তাদের জালে ধরা পড়ছে বেশ বড় সাইজের ইলিশ।
তিনি আরও বলেন, গেল বছর লক্ষ্মীপুর জেলায় ২০ হাজার মেট্রিক টন ইলিশ ধরা হয়েছিল, এবার আশা করা হচ্ছে তা ২৫ মেট্রিক টন ছাড়িয়ে যাবে।
ওই মৎস্য কর্মকর্তা মনে করেন জাটকা শিকার, মা ইলিশ ধরা নিষিদ্ধ ও সমুদ্রে ৬৫ দিন ইলিশ ধরা নিষিদ্ধসহ সরকারের পদক্ষেপের কারণে দেশে ইলিশের উৎপাদন বেড়েছে।
একই ধরনের তথ্য জানালেন বরিশাল জেলার মৎস্য কর্মকর্তা (ইলিশ) বিমল চন্দ্র দাস।
তিনি বলেন, টানা ৬৫ দিন সাগরে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা, এক মাস সাগর উত্তাল থাকায় জেলেরা মাছ ধরতে না পারা সবমিলিয়ে এবারে মাছের উৎপাদন ভালো এবং সাইজও বড়। যে মাছ ৬শ গ্রামে ধরা হতো এখন তা ধরা হচ্ছে ১ কেজির উপরে।
তিনি বলেন, গেল বছর বরিশাল জেলায় প্রায় ৪১ হাজার মেট্রিক টন ইলিশ ধরা পড়েছে। এবার তা ছাড়িয়ে ৫০ হাজার মেট্রিক টন হতে পারে।
হাতিয়ার নিঝুম দ্বীপের ইলিশ মোকাম মালিক কেফায়েত উল্লাহ বলেন, গত কিছুদিন মেঘনায় বেশ বড় সাইজের ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে। পরিবেশ পরিস্থিতি ঠিক থাকলে আরও কিছুদিন জালে ইলিশ আসবে।
তিনি মনে করছেন ইলিশের ভরা মৌসুম পিছিয়ে যাচ্ছে। আর সে কারণে নিষেধাজ্ঞার সময়ও পেছানোর দরকার।